
প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে ছাত্র রাজনীতির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা থেকে গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রধান ভূমিকা ছিল। ছাত্র রাজনীতির চর্চার অন্যতম প্লাটফর্ম হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। কেননা রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঢাকার সবচেয়ে নিকটে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান।
বসবাসযোগ্য একটি সুশৃঙ্খল নারায়ণগঞ্জ বিনির্মাণে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। অতীতের ছাত্র নেতাদের ত্যাগের মহিমা মিশে আছে এ নারায়ণগঞ্জে। তবে ছাত্র রাজনীতির গৌরবজ্বল ইতিহাসের স্বাক্ষী এ নারায়ণগঞ্জে করোনাসহ বেশ কিছু কারণে ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়া, বিতর্কিত হওয়াসহ গন্তব্যহীণভাবে চলছে ছাত্র রাজনীতি।
দীর্ঘ কয়েক মাস করোনা ভাইরাসের প্রভাবের পর গত জুন থেকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে অর্থনীতি ও রাজনীতি। কিন্তু তারপরও ছাত্র সংগঠনগুলো সহ রাজনৈতিক দলগুলোর সকল সংগঠনের কার্যক্রম চলছে অনেকটা ঢিমেতালে। ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল আছে বিতর্ক ও কোন্দলের চুড়ায়। ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর ইয়াবা সেবনের ছবি প্রকাশ্যে আসা, জেলা ছাত্রলীগের এক নেতার বিশালাকার ছবি, এ নেতা ও তার চাচার দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে এমন দাবীতে এসপি অফিসের সামনে এবং ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা, জাল স্ট্যাম্পসহ ছাত্রলীগের দুজন নেতা ধরা পড়া, চাষাড়ায় টর্চার সেল, জুয়ারী শাহজাহানকে অপহরণ সহ বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয়ে জড়িয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে সংগঠনটির জেলা-মহানগর শাখার বর্তমান-সাবেক নেতৃবৃন্দ ও সংগঠনটির গৌরবজ্জল ইতিহাসের।
অপরদিকে, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় এবং পুলিশি হামলা-মামলার কারণে করোনা পরিস্থিতিতেও ছাত্রদলের কার্যক্রম তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। সবশেষ সংগঠনটির জেলা-মহানগরের আওতাধীণ কয়েকটি শাখা কমিটি ঘোষণা করার পর কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল, সভা-সমাবেশ হয়েছে। এমনকি জেলা শাখার সভাপতিকে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এর আগে করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের কিছু নেতা নিজ উদ্যোগে অসহায়দের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করলেও অধিকাংশরা ছিলো ঘরের ভেতরে।
এর আগে ২০১৯ সালে মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের জেলা কমিটি গঠন হয়। একই সময়ে শাহেদকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি গঠনের পর থেকে করোনা পুর্ববর্তী সময়ে হাতেগোনা ২০-২৫ জন ছাত্রনেতাদের নিয়ে দু/চারটি মিছিল করলেও অধিকাংশ সময়েই তারা নিস্ক্রিয় ভুমিকা পালন করে বলে তৃণমূল ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শুরেতেই ছাতরাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে আড়ালে চলে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে ছাত্র শিবিরের কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানা যায়। অথচ বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে অন্য যে কোন সংগঠনের তুলনায় শিবির অন্যতম শক্তিধর সংগঠন হিসাবে দেশে তান্ডব চালিয়েছিলো বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জে শিবিরের আধিপত্যের ইতি ঘটে।
এছাড়া, জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন হিসাবে পরিচিত জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলা ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও তা অনেকটা কাগজে কলমে। নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির তেমন একটা শক্ত অবস্থান না থাকায় সংগঠনটির অবস্থা অনেকটা নড়বড়ে। মাঝে মাঝে সাবেক সাংসদ নাসিম ওসমানের পরিবারগুলোর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে দলবলসহ দেখা যায় তাদের। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আদায়ে বা গণমানুষের অধিকার আদায়ে তাদের কখনো দেখা যায় নি।
এদিকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা সক্রিয় থাকলেও উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। স্বল্প সংখ্যক কর্মী দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে তাদের কার্যক্রম।
এদিকে তিন বছর আগে আংশিকভাবে গঠন করা জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ পূর্ণতা পায় তার পরের বছরই। বর্তমান কমিটি দুটি পূর্ণতা পেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে এখনো পর্যন্ত খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারেনি কমিটির নেতৃবৃন্দরা এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল।
নারায়ণগঞ্জে ছাত্র রাজনীতি গতি ও গন্তব্যহীণ ভাবে চলার কারণে সাধারণ ছাত্রসহ নারায়ণগঞ্জবাসী অনেক ক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্নেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্নেষক মহলের মতে, ‘ছাত্রসমাজকে ভবিষ্যতে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়া ও দেশসেবায় সরাসরি নিয়োজিত হওয়ার জন্য রাজনীতি চর্চার বিকল্প নেই। সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন একটি নির্দিষ্ট ফোরামের আওতায় ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হওয়া দরকার।’
ছাত্রদলের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার বিষয়ে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার জন্য প্রশাসন ও সরকারের একমুখী নীতি দায়ী।’ তার উপর বর্তমানে চলছে করোনা প্রভাব।
ছাত্রলীগের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার কথা অস্বীকার করে ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় মাঠে-ময়দানে, রাজপথে ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
No posts found.